আমরা অনেকেই চাই ইউটিউবার হতে এবং ইউটিউব থেকে আয় করতে। কিভাবে ইউটিউব থেকে আয় করবেন? ও ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় কি? এবং ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
ইউটিউব কি?
ইউটিউব বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট। এই সাইটে চ্যানেল খুলে ভিডিও শেয়ার করা যায়। যারা ভিডিও শেয়ার করে তাদের ইউটিউবার বলা হয়। এই ওয়েবসাইটটি গুগলের মালিকানাধীন। ভিডিওতে মন্তব্য করার সুবিধাও রয়েছে। কনটেন্ট ক্রিয়েটরা তাদের ভিডিও সামগ্রী ইউটিউবে আপলোড করে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে আয় করতে পারেন। ইউটিউব কপিরাইট আইন খুব ভালোভাবে মেনে চলতে হবে। এই জন্য অন্যদের কোনো কপিরাইটযুক্ত ভিডিও শেয়ার করলে চ্যানেল বাতিল হয়ে যাবে।
ইউটিউব মনিটাইজেশন নতুন নীতিমালা
ইউটিউব মনিটাইজেশন নতুন নীতিমালায়, এইবার অর্থ উপার্জনের পদ্ধতি আরো সহজ করে দিল ইউটিউব, Google-এর মালিকানাধীন বিশ্বের বৃহত্তম ভিডিও প্ল্যাটফর্মটিকে আরও সহজ করে তুলেছে৷
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন পেতে বেশ কিছু কঠিন ধাপ অতিক্রম করতে হয়। ফলে দেখা যায় অনেকেই চ্যানেল খুললেও কিছুটা হতাশ হয়ে মাঝপথে ভিডিও আপলোড বন্ধ করে দেন। তাদের কথা চিন্তা করে ইউটিউব মনিটাইজেশন প্রক্রিয়াকে একটু সহজ করে দিয়েছে। এবার আপনি খুব সহজে ইউটিউব থেকে ইনকাম করতে পারবেন।
ইউটিউব নতুন নীতিমালা?
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম 2023 নীতি অনুসারে, মনিটাইজেশন শুরু করার জন্য ইউটিউব চ্যানেলের কমপক্ষে 500 জন সাবস্ক্রাইবার বা গ্রাহক থাকতে হবে, (যা আগে 1000 ছিল)। শুধু তাই নয়, ভিডিও দেখার সময় 4000 ঘন্টার পরিবর্তে 3000 ঘন্টা হবে।
- ৫০০ সাবস্ক্রাইবার।
- ৩০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম।
- ৩ মাস এর মধ্যে ৩ টি ভিডিও থাকতে হবে।
শর্টস ভিডিওর ভিউ 10 মিলিয়ন থেকে কমিয়ে 3 মিলিয়নে আনা হয়েছে। এছাড়াও মনিটাইজেশন আবেদনের 90 দিনের মধ্যে কমপক্ষে 3টি ভিডিও আপলোড করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ নতুন অ্যাপস এক অ্যাপে এতকিছু কিভাবে সম্ভব
ফলে, এই নতুন নীতির অধীনে, নতুন চ্যানেলগুলি সহজেই ইউটিউব থেকে আয় বা মনিটাইজেশন শুরু করতে পারবেন। এবং ইউটিউব থেকে আয় করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে, নতুন নীতিমালা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বাসিন্দাদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। পর্যায়ক্রমে, অন্যান্য দেশের বাসিন্দাদের জন্য ও তারাও এই নীতির অধীনে চ্যানেলে মনিটাইজেশন সুবিধা চালু করবে।
কপিরাইট নীতিমালা
ইউটিউবের এই নতুন নীতিতে, গ্রাহক এবং ভিডিও দেখার সময় কমানো হয়েছে, তবে যদি ইউটিউবের কমিউনিটি নীতি না মেনে ভিডিও তৈরি করা হয়, তাহলে সেই চ্যানেল কোনোভাবেই মনিটাইজেশনের অন্তর্ভুক্ত হবে না। এমনকি আপনার চ্যানেলে ‘গাইডলাইন স্ট্রাইক’-এর ভয়ও রয়েছে। আর তাই আপনাকে অবশ্যই আপনার নিজের ভিডিও চ্যানেলে দিতে হবে। অন্যের ভিডিও আপনার চ্যানেলে দেওয়া যাবে না। এছাড়াও, ভিডিওতে ব্যবহৃত শব্দ বা সঙ্গীত অবশ্যই কপিরাইট ফ্রি হতে হবে।
আরও পড়ুনঃ অনলাইনে আয় করার সহজ উপায়
ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায়
ইউটিউব অনলাইনে আয় করার জন্য আপনাকে কনটেন্ট ক্রিয়েট করতে হবে। এবং আপনার মেধা থাকলে অল্প পরিশ্রমেই আপনি ইউটিউব থেকে হাজার হাজার টাকা আয় করতে পারেন। এবং অনেক ইউটিউবারা মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। আপনি ইউটিউব থেকে পাঁচটি উপায়ে আয় করতে পারবেন।
- গুগল এডসেন্স
- স্পন্সার শিপ
- এফিলিয়েট মার্কেটিং
- প্রোডাক্ট রিভিউ
- নিজের প্রোডাক্ট বিক্রি করে
উপরে দেওয়া এই মাধ্যম গুলো থেকে ইউটিউব থেকে মাস লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন। পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত দেওয়া হল।
গুগল এডসেন্স:
অ্যাডসেন্স হল গুগলের বিজ্ঞাপনী সংস্থা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইউটিউবারদের আয়ের প্রধান উৎস হল ইউটিউব অ্যাডসেন্স থেকে আয়। আপনি যদি হাই কোয়ালিটি কন্টিনেন্ট ক্রিয়েট করেন তাহলে ইউটিউব অ্যাডসেন্স থেকে আপনি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন।
একজন ইউটিউবার তার চ্যানেলের জন্য গুগল এডসেন্স এর জন্য আবেদন করতে কিছু প্রয়োজনীয় সত্য পূরণ করতে হবে।
- ৫০০ সাবস্ক্রাইবার
- ৩০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম
- ৩ মাসের মধ্যে ৩টি ভিডিও চ্যানেল থাকতে হবে।
এই সত্যগুলো পূরণ করলে ইউটিউব আপনার চ্যানেলে গুগল এডসেন্সের অনুমোদন দিবে।
স্পন্সার শিপ
ইউটিউবার যাদের অনেক বেশি ফলোয়ার এবং সাবস্ক্রাইবার আছে তারা স্পনসরশিপ থেকে অনেক আয় করতে পারে। বড় এবং জনপ্রিয় ইউটিউবারা এই মাধ্যম থেকে খুব সহজে আয় করতে পারেন। এটি তাদের জন্য একটি জনপ্রিয় এবং সেরা উপায়। এখানে মূলত অন্য কোন কোম্পানি তাদের প্রচারণার জন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে। আপনার কাজ হবে আপনার তৈরি করা ভিডিওগুলির মাধ্যমে তাদের কোম্পানির প্রচার করা।
এই পদ্ধতিটির মাধ্যমে অ্যাডসেন্সের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। আপনি আপনার ভিডিওতে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন। বিনিময়ে কোম্পানি আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে।
এফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো একটি বিশেষ লিঙ্কের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য বিক্রি করা। বিভিন্ন অনলাইন শপ এবং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন: আমাজন, ডায়না হোস্ট, বাগডুম, বিডি শপ ইত্যাদি। আপনার youtube চ্যানেল এর মাধ্যমে এদের প্রোডাক্ট বিক্রি করে আপনি আয় করতে পারবেন।
এই কারণে, প্রতিটি পণ্যর জন্য 2-15% পর্যন্ত কমিশন পাওয়া যায়। যেমন 10% কমিশন হারে আপনি যদি ১০,০০০ টাকা মূল্যের ৫টি পণ্য বিক্রি করতে পারেন তাহলে আপনি ৫,০০০ টাকা কমিশন পাবেন।বর্তমানে অধিকাংশ ইউটিউবাররা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে থাকে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা লিংক শেয়ারিং করে গুগল অ্যাডসেন্সের চেয়ে বেশি টাকা আয় করা যায়।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা লিঙ্ক শেয়ারিং হল একটি পদ্ধতি যেখানে আপনার কোম্পানির সাথে একটি চুক্তি আছে। চুক্তি অনুযায়ী আপনি আপনার ভিডিওতে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির লিঙ্ক শেয়ার করবেন। অন্যথায় কমিশন হিসেবে লিঙ্ক শেয়ার করবেন। ওই লিংকে ক্লিক করে কেউ যদি প্রোডাক্ট টি ক্রয় করে তাহলে আপনি আপনার পার্সেন্টেজ পেয়ে যাবেন।
প্রোডাক্ট রিভিউ
প্রোডাক্ট রিভিউ বলতে মূলত যেকোনো একটি কোম্পানি আপনাকে একটি পণ্য দেবে। সেই পণ্যটি আপনি আপনার youtube চ্যানেলে ওই পণ্য সম্পর্কে একটি ভিডিও তৈরি করে আয় করতে পারেন। আপনাকে সেই পণ্যটির একটি সুন্দর পর্যালোচনা ভিডিও তৈরি করতে হবে।
যেমন একটি কোম্পানি আপনাকে একটি ফোন দিয়েছে সেই ফোনটির ভালো দিক এবং খারাপ দিক সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে আপনি একটি ভিডিও তৈরি করলেন। এবং এটি আপনার চ্যানেলে আপলোড করতে হবে। এর বিনিময়ে কোম্পানি আপনাকে অনেক টাকা দিবে।
নিজের প্রোডাক্ট বিক্রি
আপনি আপনার youtube চ্যানেলের মাধ্যমে আপনার নিজস্ব পণ্য বিক্রি করে সহজেই আয় করতে পারবেন। যেমন আপনার একটি দোকান আছে সেখানে আপনি টি-শার্ট বিক্রি করেন। সেই টি-শার্টগুলো সম্পর্কে একটি ভিডিও তৈরি করলেন। এবং বলে দিলেন যে আপনাদের যদি এই টি-শার্টগুলো পছন্দ হয় তাহলে আপনারা আমার কাছ থেকে এই টি-শার্টগুলো ক্রয় করতে পারবেন। তাহলে আপনার অনেক সাবস্ক্রাইবাররা এই টি-শার্টগুলো কিনবে। বেশিরভাগ ইউটিউবার এই পদ্ধতির মাধ্যমে আজকাল প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। কারণ আপনি জনপ্রিয় হয়ে উঠলে সেখান থেকে আয়ের কোনো সহজ উপায় থাকবেনা।
শেষ কথা
ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। আপনি যদি একজন ইউটিউবার হয়ে থাকেন তাহলে এই পাঁচটি বিষয়ের মাধ্যমে youtube থেকে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন। যারা নতুন ইউটিউবার হতে চান তারা যেকোনো একটি নিস নিয়ে হাই কোয়ালিটি ভিডিও তৈরি করে খুব কম সময়ের মাধ্যমে ইউটিউব চ্যানেলটি জনপ্রিয় করে তুলতে পারবেন। এবং উপরে দেওয়া ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায় মাধ্যমে youtube থেকে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন। পরিশ্রম না করলে সফল হতে পারবেন না।