ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের হাড় গুলো ভালো রাখে। ক্যালসিয়ামের অভাবে কি হয় এবং ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির উপায় ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার কি কি বিস্তারিত জেনে নিন।
শরীরের বিভিন্ন চাহিদা পূরণের জন্য আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। এই খাবারগুলো আমাদের শরীরকে ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন সরবরাহ করে। এছাড়া আরও অনেক উপাদান আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন, ক্যালসিয়াম তার মধ্যে অন্যতম।
ক্যালসিয়াম এর কাজ কি?
মানবদেহ সুস্থ থাকার জন্য ক্যালসিয়াম গুরুত্ব অপরিহার্য। ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা শরীরের হাড় মজবুত করে। সাধারণভাবে, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন 700 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। তবে গর্ভাবস্থায় এবং যে মায়েরা তাদের বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ান তাদের ক্ষেত্রে iএটি আরও বেশি প্রয়োজন। আমাদের শরীরের 99% ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁতে জমা হয়। অবশিষ্ট 1 শতাংশ রক্ত, পেশী এবং কোষীয় তরলে পাওয়া যায়। আমাদের শরীর হাড় দিয়ে গঠিত। কিন্তু আমরা বেশিরভাগই হাড়ের যত্ন সম্পর্কে কিছুই জানি না।
ক্যালসিয়ামের অভাবে কি হয়?
প্রতিটি মানুষের শরীরের ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে পেশীতে ব্যথা, ক্র্যাম্প বা খিঁচুনি হতে পারে। হাঁটা বা নড়াচড়া করার সময় উরু এবং বাহুতে ব্যথা ছাড়াও, হাত, বাহু, পা এবং মুখের চারপাশে অসাড়তা অনুভূত হতে পারে। ক্যালসিয়ামের অভাব চরম ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে, ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা ভাল।
যে খাবার গুলো হাড়ের ক্ষয় করেঃ
আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এমন কিছু খাবার বা খাদ্য উপাদান থাকে যা আমাদের হাড়ের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যেমন, লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম ক্লোরাইড, কোমল পানীয়, চা ও কফিতে থাকা ক্যাফেইন, অতিরিক্ত প্রোটিন বা প্রাণিজ প্রোটিন ইত্যাদি। এই খাবার গুলো কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন এই খাবার গুলো আপনার হাড়ের ক্ষয় করে।
ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির উপায়ঃ
আমাদের বয়স চল্লিশ পারলেই শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। আর ক্যালসিয়ামের অভাব মানেই হাড়ের সমস্যা। হাড়ের ক্ষয় হয়ে যায় এবং হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা বেশি হয়।
আরও পড়ুনঃ সেক্সে বৃদ্ধির খাবার কি। সেক্সে বৃদ্ধির ১০ টি প্রধান খাবার সম্পর্কে জানুন
তাই হাড়ের ক্ষয় কমানো ও হাড়ের ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য চিকিৎসকরা কিছু পরামর্শ দেন। কিছু খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। দুপুর বা রাতের খাবারে পর্যাপ্ত মাছ, মাংস, ডিম, দুধ থাকুক বা না থাকুক, বাদাম রাখতে হবে। বাদাম এ প্রচুর ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। নিয়মিত এই মেনু গুলো খাবার এ রাখার চেষ্টা করবেন।
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার কি কিঃ
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের উপায় জেনে নিন। বিস্তারিত নিছে দেওয়া হল।
আরও জানুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়
দুধঃ
দুধ সবচেয়ে ভালো ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। এটি শুধুমাত্র শিশুদের জন্য নয়, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও একটি অপরিহার্য খাবার। এটি এমন একটি খাবার যা শরীর দ্বারা সহজেই অক্সিডাইজড এবং শোষিত হয়, যার ফলে শারীরিক বৃদ্ধি এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে ও হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
টকদইঃ
অনেকেই দুধ খেতে পারেন না বা দুধে অ্যালার্জি হয়। টক দই দিয়ে তারা তাদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে। আপনি দই থেকে একই পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাবেন। তারা দুধ খেতে পারেন না তারা টকদই খাবেন।
খেজুরঃ
খেজুরে রয়েছে ক্যালসিয়াম, সালফার, আয়রন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ম্যাগনেসিয়াম। নিয়মিত কমপক্ষে ৪-৫ খেজুর খাবেন। খোরমা খেজুর খেলে উপকার হবে। খেজুরের শরীরে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করে।
কাঠ বাদামঃ
এক কাপ ভাজা চিনাবাদাম 475 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে। তবে এটি প্রতিদিন খাওয়া উচিত নয়, এক কাপ চিনাবাদামে প্রায় 1000 ক্যালরি থাকে। এটি এক দিন বাঁধ দিয়ে এক দিন খাবেন।
আরও পড়ুনঃ যৌবন শক্তি বৃদ্ধির খাবার দুধ-রসুনের উপকারিতা
চিজঃ
প্রোটিন পনির থেকে আসে কারণ এটি দুধ থেকে তৈরি হয়। পারমেসান পনিরে সর্বোচ্চ পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। এটি প্রতি আউন্সে 331 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।
ডিমঃ
ডিমকে বলা হয় ‘সুপারফুড’। ডিম ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ। ডিম প্রোটিনের সবচেয়ে ভালো উৎস। যা হাড়ের গঠন মজবুত করে। আর এতে ক্যালরির পরিমাণও খুবই কম। তাই হাড়ের সুস্থতার জন্য দিনে অন্তত একটি ডিম খাওয়ার অভ্যাস করুন।
তিলঃ
তিলের বীজ সাধারণত বার্গার বানগুলিতে ব্যবহৃত হয়। এক টেবিল চামচ তিলের বীজ 88 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে। তিল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি।
কমলাঃ
সাইট্রাস ফল কমলায় শুধু ক্যালসিয়ামই নয়, ভিটামিন ডিও রয়েছে যা শরীরের হাড় মজবুত করে। তাই প্রতিদিন সকালে নাস্তার সময় এক গ্লাস কমলার রস খেতে পারেন, এতে শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হবে এবং হাড় মজবুত হবে।
মটরশুটিঃ
মটরশুটি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ যা হাড় মজবুত করে ও হাড় ক্ষয়রোদ করে। এক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের শিম খেতে পারেন।
সয়াবিনঃ
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে সয়াবিন খুবই কার্যকরী। এক কাপ সয়াবিনে প্রায় 175 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। তাই নিয়মিত সয়াবিন খাবেন আপনার শরীরে ক্যালসিয়াম আর ঘাটতি পূরণ হবে।
সবুজ শাক সবজিঃ
সবুজ শাক সবজিতে আছে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সমৃদ্ধ। এটি ওজন ঠিক রাখার পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এই জন্য নিয়মিত খাবের সাথে সবজি রাখুন।
চিংড়ি মাছঃ
এই সুস্বাদু মাছ থেকে আপনি ক্যালসিয়াম পেতে পারেন, যদি এটি কম তাপে রান্না করা হয়। চিংড়ি বেশি রান্না করবেন না। কারন এতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সামুদ্রিক মাছ, ডিম, মাংসও ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।
শেষ কথাঃ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন কমপক্ষে 1,000 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। আর আমরা প্রতিদিনের খাবার থেকে এই ক্যালসিয়াম পেয়ে থাকি। তাই ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ বাডানোর জন্য মেনুতে উপরে দেওয়া ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গুলো রাখার চেষ্টা করবেন।